আমরা আমাদের বাসা বাড়িতে কি পরিমান বিদ্যুৎ ব্যবহার
করছি। তাকে কখনো ভেবে দেখেছি । আজকে আমরা ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল
কিভাবে বের করা যায় সেই সম্পর্কে আলোচনা করব। বিদ্যুৎ বিলের ধারণা সম্পর্কে
বোঝা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যুৎ বিলের হিসাব সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কজন আমরা
সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি। আপনার মাসিক খরচের বড় একটি অংশ বিদ্যুৎ
বিল। তাই বিদ্যুৎ বিল কিভাবে বের করবেন এবং কি কি করলে আপনার বাসা
বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে সেই বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করব।
বিল হিসাব করার জন্য প্রথমে আমরা একটি নিয়ম অনুসরণ করব। এবং সেই নিয়ম
অনুযায়ী আমরা বাসা বাড়িতে কিংবা যেকোনো জায়গায় এই নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ
বিলের হিসাব বের করতে পারব।
নেট বিল = এনার্জি বিল+ মিটার বিল
এনার্জি বিল= এক মাসে ব্যবহৃত ইউনিটের পরিমাণ
(KWh) প্রতি ইউনিটের মূল্য
মিটার বিল= ডিমান্ড চার্জ+ সার্ভিস চার্জ
ডিমান্ড চার্জ= ১৫ টাকা পাওয়ার কিলো ওয়াট
সার্ভিস চার্জ= ১০ টাকা সিঙ্গেল পেজের জন্য, ৩০ টাকা থ্রি পেজের জন্য
ভ্যাট= নেট বিল এর সাথে ৫% যোগ
এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর বিল পরিশোধ করতে না পারলে= নেট বিলের
সাথে ৫% যোগ
বাসা বাড়িতে আমরা যে ধরনের বৈদ্যুতিক লোড ব্যবহার করিঃ-
লাইট সাধারণত = ১৫-১০০ ওয়াট
ফ্যান সাধারণত = ৫০-১০০ ওয়াট
টেলিভিশন = ৫০-১০০ ওয়াট
ল্যাপটপ = ২০-১০০ ওয়াট
রেফ্রিজারেটর = ৮০-২০০ ওয়াট
আয়রন = ৫০০-১০০০ ওয়াট
এসি = ১০০০ - ৩০০০ ওয়াট
পাম্প মটর = ১/৮ থেকে ৩ হর্স পাওয়ার
ডেক্সটপ কম্পিউটার = ৮০-২৫০ ওয়াট
অতিরিক্ত বিল এড়ানো
আমাদের বাসা বাড়িতে কিছু কিছু সময় দেখা যায় অতিরিক্ত বিল আসে। আবার
দেখা যায় বিল গণনা সঠিকভাবে না হলে অতিরিক্ত বিল আসে। মাসের শেষের দিকে
অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। অতিরিক্ত বিল এড়াতে নিয়মিত মিটারের রিডিং
নিন। প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। প্রয়োজন ছাড়া
অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহার কম করুন বা বন্ধ করুন সঠিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার
করুন তাহলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়
নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। বিদ্যুৎ বিল
হিসাব করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় আলো, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার
বন্ধ রাখুন। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করলে পরিবারের শান্তি বজায় থাকবে পরিবেশ ও ভালো
থাকবে। এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
অ্যানালগ মিটার
অ্যানালগ বলতে আমরা বুঝি পুরনো। এনালগ মিটার সাধারণত পুরনো ধরনের
মিটার কে বোঝায়। এনালগ মিটারে একটি ডায়াল থাকে যা বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ
দেখায়। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে এনালগ মিটারের রিডিং নিতে
পারেন। আপনার বুঝতে অনেকটা সহজ হবে।
প্রথমে সেই অ্যানালগ মিটারের ডায়ালগুলোর দিকে নজর দিন।
প্রত্যেক ডায়ালে একটি সূচক থাকে যা সংখ্যার দিকে নির্দেশ
করে।
এনালগ মিটারের ডায়ালের সংখ্যা গুলো একের পর এক পড়ুন।
ডান থেকে বাম দিকে পড়ুন এবং প্রতিটি সংখ্যার মান পড়ুন ও নোট করুন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনার বাসা বাড়িতে আপনি নিজেই বিদ্যুৎ বিলের হিসাব বের
করতে পারবেন।
ডিজিটাল মিটার
ডিজিটাল বলতে আমরা আধুনিকে বুঝি। ডিজিটাল মিটার আধুনিক এবং সেটা
সহজেই পড়া যায়। ডিজিটাল মিটারের সংখ্যাগুলো ডিসপ্লেতে দেখা যায় যা সরাসরি
বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ দেখায়। ডিজিটাল মিটারের রিডিং নিতে এই ধাপগুলো অনুসরণ
করুনঃ
এই সংখ্যাগুলোই আপনার বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ নির্দেশ করে।
সংখ্যাগুলো নোট করুন এবং পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করুন।
ডিজিটাল মিটারের ডিসপ্লেতে হিসাবের সংখ্যা গুলো দেখা যায়। তাই আপনি
খুব সহজেই ঘরে বসে আপনার বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল বের করতে পারবেন।
বিল গণনার ধাপসমূহ
সঠিকভাবে বিল গণনা করতে পারলে আপনি আপনার খরচ কমাতে পারবেন। বিদ্যুৎ বিল হিসাব
কিভাবে করা হয় তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এই
বিদ্যুৎ বিলের রেট নির্ধারণ করে। আপনার বিদ্যুৎ বিলের হিসাব
আপনার মিটার অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। রেপিড রেট অনুযায়ী আপনার ইউনিট
খরচের ওপর ভিত্তি করে বিল করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রতি ইউনিটের রেট ছয় টাকা হয় এবং আপনি ১০০ ইউনিট
ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার বিল হবে 600 টাকা।
মাসিক ইউনিট খরচ
আপনি যদি আপনার মাসিক ইউনিট খরচ না জানেন, তবে আপনি আপনার বিদ্যুৎ বিল হিসাব
করে বের করতে পারবেন না। তাই আপনার মাসিক ইউনিট খরচ জানতে হবে। আপনার
বিদ্যুৎ মিটারে মাসিক ইউনিট ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যাবে। প্রতিটি ইউনিটের
পরিমাণ মিটারে উল্লেখিত থাকে।
এক মাসে কতগুলো ইউনিট ব্যবহার করেছেন তা বের করুন। প্রতিদিন এর ব্যবহারের
যোগ করে মাসিক হিসাব করুন। এই তথ্য আপনার বিল গণনার মূল ভিত্তি। আপনি
খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে আপনার বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল বের করতে পারবেন।
বিল পরিশোধের পদ্ধতি
আজকাল বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যায় খুব সহজভাবে। বিদ্যুৎ বিল
পরিশোধের পদ্ধতি সহজ এবং সুবিধাজনক হওয়া উচিত এদের মধ্যে অনলাইন এবং অফলাইন
পদ্ধতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাধারণত এই দুই উপায়ে আমরা বিদ্যুৎ বিল
পরিশোধ করে থাকি।
অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পেমেন্ট
বর্তমান সময়ে খুব সহজেই আপনি আপনার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেন অনলাইনের
মাধ্যমে। অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় এবং
সহজ একটি উপায়। আপনি এখন ঘরে বসে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মোবাইল দিয়ে আপনার
বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারবেন। বিকাশ, নগদ, রকেট
ইত্যাদি এরকম বিভিন্ন সাইট থেকে আপনি ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার বিদ্যুৎ বিল
পরিশোধ করতে পারবেন।
অফলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ
আমরা এই সময়ে এসেও অনেকেই অফলাইনে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকি। অফলাইনে বিদ্যুৎ
বিল দেওয়ার পদ্ধতি হল ব্যাংক শাখা, পোস্ট অফিস ও বিদ্যুৎ অফিস। এই তিন
পদ্ধতিতে আমরা সাধারণত অফলাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে
থাকি। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য এই পদ্ধতিগুলি সহজ এবং সুবিধাজনক
আপনার অনুযায়ী পদ্ধতি নির্বাচন করুন সঠিক সময়ের মধ্যে।
মিটার সমস্যা
কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মিটারে সমস্যা থাকার কারণেও বিদ্যুৎ বিল বেশি
আসে। বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার এটাই প্রধান কারণ। এটা সঠিকভাবে কাজ করে
না, মিটার রিডিং এর ত্রুটি, মিটার সংযোগের সমস্যা। এরকম নানাবিধ
সমস্যার কারণে, আপনার বাসা বাড়িতে বৈদ্যুতিক বিল বেশি আসতে পারে। তাই
এই বিষয়গুলি সবাই সতর্ক থাকবেন।
অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো
আমরা অনেক সময় বিদ্যুৎ অপচয় করে থাকি। বিদ্যুৎ অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে
হবে। অপ্রয়োজনীয় লাইট বন্ধ রাখুন। দিনের আলো ব্যবহার করুন ঘরে কেউ না
থাকলে ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার বন্ধ রাখুন। এলইডি লাইট ব্যবহার
করুন। রান্নার সময় মাইক্রোওয়েভ ওভেনের পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহার
করুন। কাজ শেষে কম্পিউটার বন্ধ রাখুন। টিভি দেখার পরে সেট বন্ধ রাখুন।
অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার ত্যাগ করুন। এতে আপনার বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বড় একটি ভূমিকা পালন করে। এলইডি
লাইট ব্যবহার করুন। এলইডি লাইট কম বিদ্যুৎ খরচ করে। বাসা বাড়িতে সোলার
প্যানেল ব্যবহার করুন। সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ বিল কমায়। উন্নত প্রযুক্তির
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করুন। এতে করে
আপনার বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। পরিবারের শান্তি বজায় থাকবে।
মন্তব্যঃ বিদ্যুৎ বিল বের করার নিয়ম
বিদ্যুৎ বিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে উপরে আলোচনা করেছি। আপনারা এতক্ষণে
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে বিদ্যুৎ বিল বের করতে হয়। এবং কিভাবে বিদ্যুৎ
বিল এর খরচ কমানো যায়। আশা করছি, উপরের নিয়ম গুলো জানা থাকলে আপনি খুব
সহজেই আপনার বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের হিসাব বের করতে পারবেন। এবং উন্নত
প্রযুক্তির ব্যবহারে কিভাবে বিদ্যুৎ বিল কমানো যায় সে সম্পর্কেও আপনারা
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
প্রিয় পাঠক, উপরের তথ্য অনুযায়ী আপনি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে ধারণা
নিয়ে বিল বের করতে পারবেন। আশা করছি আপনি আর্টিকেলটি পড়ে বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে
তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এটি শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও
উপকৃত হতে পারে। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই
কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যমূলক বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের
ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।
ইস্তিয়াক ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url